শকুনি: রাজনীতি না প্রতিশোধ?
- Arunava Khasnobis
- Aug 3
- 2 min read
মহাভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্রদের তালিকায় শকুনি শীর্ষে। কেউ বলেন সে ছিলেন ধূর্ত রাজনীতিবিদ, কেউ বলেন প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে যাওয়া এক ভাই, যে নিজের ভাগ্নেকে সিংহাসনে বসাতে গিয়ে গোটা কুরুবংশকে ধ্বংস করে দিল। প্রশ্ন উঠেই যায়: শকুনির চাল—বুদ্ধির খেলা, না ক্ষতবিক্ষত আত্মার প্রতিক্রিয়া?
গান্ধাররাজ, না কৌরবদের ষড়যন্ত্রী?
শকুনি গান্ধারের রাজপুত্র। তাঁর বোন গান্ধারী যখন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে বিয়ে করেন, তখন থেকেই ক্ষোভ জন্মায় শকুনির মনে। বোনের জীবনের সঙ্গে করা এই আপসকে সে মেনে নিতে পারেনি। কুরুদের উপর এই ক্ষোভই তাকে রাজসভায় কৌরবদের ‘পরামর্শদাতা’ হওয়ার পথে ঠেলে দেয়।
একটি কথিত কাহিনি: কারাগারের প্রতিশোধ
বহু সূত্রে উল্লেখ আছে—গান্ধার রাজবংশের পুরুষদের কুরুদের রাজসভায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ধৃতরাষ্ট্র যাতে গান্ধারীকে বিয়ে করে কুরুদের অধীনতা মেনে নিতে বাধ্য করেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই বন্দিত্ব। বন্দীদের এক সময় শুধু একজনের জন্য খাবার দেওয়া হয়। তখন সবাই সম্মত হয়, শকুনি যেন বেঁচে থাকে এবং প্রতিশোধ নেয়। শোনা যায়, এই ঘটনার পর থেকেই শকুনি তার বাবার হাড় দিয়ে পাশার কৌশলী পাশা বানায়, যা পরে দুর্যোধনের হয়ে ব্যবহার করে।
এই গল্প পুরোটাই পৌরাণিক, কিন্তু ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
রাজনৈতিক বুদ্ধি, না ব্যক্তিগত এজেন্ডা?
শকুনির অনেক সিদ্ধান্ত নিখুঁত কূটনীতি মনে হতে পারে। দ্রৌপদীর অপমান, পাশার খেলা, বনবাসের আয়োজন—সবই ছিল পাণ্ডবদের ধ্বংস করার সুচিন্তিত কৌশল। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কৌরবদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা নয়, বরং পাণ্ডবদের বারবার অপমানিত করা। এতে বোঝা যায়, রাজনীতি ছিল তার হাতিয়ার—প্রতিশোধ ছিল আসল লক্ষ্য।
একজন ব্যর্থ কৌশলবিদ?
যদিও শকুনি একের পর এক কূটকৌশল সাজিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পতন হয়, এবং তিনি নিজেও মৃত্যুবরণ করেন। ফলে ইতিহাস তাঁকে এক সফল ষড়যন্ত্রী নয়, বরং এক ক্ষুব্ধ ভাইয়ের ভুল প্রতিশোধ পরিকল্পনার প্রতীক হিসেবে দেখে।
শেষ কথা
শকুনি কি নিছক এক ভিলেন? না কি সেই সময়ের রাজনীতির এক চরম বাস্তবতা? হতে পারে সে তার নিজের চোখে ন্যায়ের জন্য লড়ছিল, কিন্তু সেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিটি এমন ছিল, যা গোটা সমাজকে তছনছ করে দিল।
তাই শকুনিকে শুধু “ধূর্ত” বললে কম বলা হয়, আর “শহীদ” বললে বাড়িয়ে বলা হয়। সে এক জটিল চরিত্র—যার ভিতরে গলে মিশে আছে রাজনীতি, প্রতিশোধ আর হারিয়ে ফেলা পরিবারের কান্না।



Comments