top of page

Sondesh.tv

মহাভারত এবং আজকের রাজনীতি: সাদৃশ্য ও পার্থক্য

  • Writer: Arunava Khasnobis
    Arunava Khasnobis
  • Aug 4
  • 3 min read

মহাভারতের রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করে আপনি বর্তমান সময়ের রাজনীতির সঙ্গে এর দারুণ কিছু মিল খুঁজে বের করেছেন। আপনার পর্যবেক্ষণগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক এবং গভীর। এই বিষয়টিকে আরও সহজবোধ্য এবং আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে নিচে তুলে ধরা হলো।


রাজনীতি: চিরন্তন ক্ষমতার লড়াই


আপনার পর্যবেক্ষণটি একদম সঠিক। রাজনীতি মানেই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ, আর এই লড়াইয়ের চেহারা যুগ যুগ ধরে প্রায় একই রকম থেকেছে। মহাভারতে যেমন হস্তিনাপুরের সিংহাসনের জন্য কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে সংঘাত দেখা যায়, তেমনি আজও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার জন্য একই রকম তীব্র প্রতিযোগিতা চলে।

  • মহাভারতের ক্ষমতার লড়াই: ধৃতরাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতি অন্ধ মোহ, দুর্যোধনের সিংহাসন দখলের আকাঙ্ক্ষা, এবং যুধিষ্ঠিরের ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা—সবকিছুই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।

  • আধুনিক রাজনীতি: আজকের দিনেও রাজনৈতিক দলগুলো জনমতকে নিজেদের দিকে টেনে, প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে, এবং বিভিন্ন জোট গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে সেই একই মানবীয় দুর্বলতা—ক্ষমতার লোভ, প্রতিহিংসা এবং অহংকার।


ree

শকুনি: এক আধুনিক 'পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট'


শকুনিকে আপনি 'আধুনিক স্পিন-ডক্টরদের আদিম সংস্করণ' বলে যে উপমা দিয়েছেন, তা একেবারেই যথার্থ। শকুনি সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করে বরং কূটচাল ও মনস্তত্ত্বের খেলা দিয়ে পাণ্ডবদের সর্বনাশ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানতেন, সরাসরি যুদ্ধে জেতার চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা অনেক বেশি কার্যকর।

  • শকুনি কায়দা: পাশার ছলের মাধ্যমে তিনি পাণ্ডবদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছিলেন। তাঁর কৌশল ছিল এমন, যেখানে আইন বা নিয়মের বাইরে গিয়েও তিনি তাঁর উদ্দেশ্য সফল করতে পারতেন।

  • আধুনিক কায়দা: বর্তমান সময়ে অনেক রাজনীতিবিদও জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনতে, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে বা আইনি ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করেন। তারা সরাসরি অন্যায় না করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন, যেখানে অন্যায় কাজটি আপনাআপনিই ঘটে যায়।


ree

পাণ্ডবদের রাজনীতি: আদর্শ আর বাস্তবতার টানাপোড়েন


আপনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী পাণ্ডবরা কেবল ন্যায়ের প্রতীক ছিলেন না, তারাও নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কৌশল অবলম্বন করেছেন। আপনার এই পর্যবেক্ষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাভারত শুধু ধর্ম-অধর্মের সাদা-কালো ছবি নয়, এখানে ধূসর দিকও রয়েছে।

  • কৌশলী পাণ্ডবরা: অর্জুনের শিখণ্ডীকে সামনে রেখে ভীষ্মকে বধ করা বা যুধিষ্ঠিরের 'অশ্বত্থামা হত' বলে দ্রোণকে মিথ্যা বলা—এগুলো সবই ছিল রাজনীতির এক বাস্তব কৌশল। এই কৌশলগুলো প্রমাণ করে যে, নৈতিকতার কঠিন মানদণ্ড সবসময় যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকতে পারে না।

  • আধুনিক রাজনীতিতে এর প্রতিফলন: আজকের রাজনীতিতে নৈতিকতার কথা বলা হলেও, বাস্তবে প্রায়শই সুবিধাবাদ ও বাস্তবতার ছোঁয়া লাগে। আদর্শবাদী রাজনীতিবিদরাও অনেক সময় নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য আপস করেন, যাকে আপনি 'অর্থবাদের বাস্তবতা' বলে উল্লেখ করেছেন।


ree

দুর্যোধন: পেশিশক্তি ও অহংকারের প্রতীক


দুর্যোধনের চরিত্রটিকে আপনার বিশ্লেষণ আধুনিক রাজনীতির অহংকারী, আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদদের কথা মনে করিয়ে দেয়। দুর্যোধন ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজের মিত্রদের (যেমন কর্ণ) প্রতি অন্ধ আস্থা রেখেছেন এবং প্রতিপক্ষকে সবসময় হেয় করেছেন।

  • দুর্যোধনের ভুল: ক্ষমতার দম্ভে তিনি কোনো ভালো পরামর্শ শোনেননি। নিজের সব কিছুকে অধিকার মনে করতেন এবং পাণ্ডবদের প্রাপ্য রাজ্য ফিরিয়ে দিতেও অস্বীকার করেছিলেন।

  • বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে এর প্রভাব: অনেক রাজনীতিবিদের মধ্যেই এই ধরনের অহংকার দেখা যায়। তারা প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করে, নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ভাবে এবং জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে।


মহাভারতের চেয়ে আধুনিক রাজনীতি কোথায় আলাদা?


আপনার মতো আমিও মনে করি, আজকের রাজনীতি অনেক বেশি কাঠামোগত এবং কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত।

  • গঠনগত পার্থক্য: আধুনিক রাজনীতিতে নির্বাচন, সংবিধান, এবং বিচারব্যবস্থার মতো নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারকে কিছুটা হলেও সীমিত করে। গণমাধ্যম এবং জনগণের সচেতনতা এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

  • জটিলতা: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশ্ব অর্থনীতি এবং নীতি নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো আজকের রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


মহাভারতের কোন শিক্ষাগুলো আজ হারিয়ে গেছে?


এই প্রশ্নটি সত্যিই ভাবার মতো। মহাভারতের চরিত্রগুলোর মধ্যে কিছু মহৎ গুণ ছিল, যা আজকের রাজনীতিতে বিরল।

  • নীতি ও আত্মত্যাগ: ভীষ্মের মতো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং যুধিষ্ঠিরের মতো নীতিবান রাজনীতিবিদ এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। যুধিষ্ঠির যে রাজ্য ত্যাগ করার মতো উদারতা দেখিয়েছিলেন, তা আজকের রাজনীতিকদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে।

  • দায়িত্ববোধ: মহাভারতের রাজনীতি দেখিয়েছিল যে ক্ষমতা শুধু ভোগ করার জন্য নয়, বরং এর সঙ্গে বিশাল দায়িত্বও জড়িত। আজকের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রায়শই দায়িত্ববোধের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে।

ree

উপসংহার: মহাভারত থেকে শিক্ষার প্রয়োজন


আপনার উপসংহারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাভারত কেবল একটি প্রাচীন কাহিনি নয়, এটি মানব চরিত্রের একটি বাস্তব আয়না। মহাভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি যে, ক্ষমতার লড়াইয়ের মূল চরিত্রগুলো যুগ যুগ ধরে একই আছে। মহাভারতের শিক্ষা হলো, যুদ্ধ নয়, বরং সৎ চরিত্র এবং দায়িত্ববোধই রাজনীতির আসল ভিত্তি হওয়া উচিত। এই শিক্ষা থেকেই আধুনিক রাজনীতির অনেক কিছু শেখার আছে।

Comments


bottom of page