top of page

Sondesh.tv

ধর্মযুদ্ধ কি আদৌ ধর্মের পক্ষে ছিল?

  • Writer: Arunava Khasnobis
    Arunava Khasnobis
  • Aug 3
  • 2 min read

ধর্ম—শব্দটি যত পরিচিত, ততই জটিল। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধকে যখন বলা হয় “ধর্মযুদ্ধ”, তখন প্রশ্ন জাগে—এই যুদ্ধে কে সত্যি ধর্মের পক্ষে ছিল? আর “ধর্ম” মানেই বা কী?

এই লেখায় আমরা যাচাই করব—কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আদৌ ধর্মের পক্ষে লড়া হয়েছিল কি না। সেটা বুঝতে হলে “ধর্ম” শব্দটির ঐতিহাসিক ও নৈতিক পরিপ্রেক্ষিত, যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি, শ্রীকৃষ্ণের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুদ্ধের পরিণতির ওপর খুঁটিয়ে নজর দিতে হবে।


“ধর্ম” শব্দের বহুস্তর ব্যাখ্যা

আজকের চোখে ‘ধর্ম’ বলতে আমরা বুঝি কোনো বিশেষ ধর্মীয় মতবাদ বা আচার। কিন্তু মহাভারতের সময়ে, ধর্ম মানে ছিল নৈতিক কর্তব্য, ব্যক্তির অবস্থানভিত্তিক সঠিক আচরণ, সমাজে ভারসাম্য বজায় রাখা। রাজা, শিষ্য, গুরু, স্ত্রী, পুত্র—প্রত্যেকের ছিল আলাদা আলাদা ধর্ম।

এই বহুমাত্রিক ধারণার ভিতরেই জন্ম নেয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। এখানে “ধর্মের পক্ষে যুদ্ধ” মানে ছিল—নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা, সমাজে সত্য ও ন্যায়ের জয় ঘটানো। কিন্তু বাস্তব কি তা-ই ছিল?


ree

যুদ্ধের কারণ: কি কেবল ধর্মের প্রশ্ন ছিল?

যুদ্ধ শুরু হয়েছিল পাণ্ডবদের সাথে হওয়া একের পর এক অবিচারকে কেন্দ্র করে—

  • পাশার খেলায় প্রতারণা

  • দ্রৌপদীর প্রকাশ্যে অপমান

  • বনবাস ও অজ্ঞাতবাসে জোরপূর্বক পাঠানো

এই অন্যায়গুলো সমাজের শাসনতন্ত্রে আঘাত ছিল। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও ছিল রাজ্যাধিকার, ক্ষমতা ও প্রতিশোধের সংঘাত


যদি ধর্ম প্রতিষ্ঠা একমাত্র লক্ষ্য হতো, তবে কি শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ এড়ানোর আরও চেষ্টায় থাকতেন? না কি যুদ্ধ ছিল অনিবার্য?


ree


শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা: কৌশলী ধর্ম না মেকি ন্যায়?

শ্রীকৃষ্ণ মহাভারতের সবচেয়ে দ্বন্দ্বময় চরিত্রদের একজন। একদিকে তিনি গীতায় অর্জুনকে বলেন:

“তোমার কর্তব্য যুদ্ধ করা, কারণ তুমি একজন ক্ষত্রিয়। ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানেই অধর্মে সম্মতি দেওয়া।”

অন্যদিকে যুদ্ধের ভিতর তাঁর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ:

  • ভীষ্মকে পরাস্ত করতে শিখণ্ডীকে সামনে রাখা (যিনি ভীষ্মের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলতেন না)

  • দ্রোণাচার্যকে ভাঙানো মিথ্যা দিয়ে (“অশ্বত্থামা হত”)

  • কর্ণের রথের চাকা আটকে গেলে তাকে হত্যা করা

এইসব কৌশল ধর্ম রক্ষার নামেই ব্যবহৃত হলেও, এর ভিতরেও নীতির লঙ্ঘন ছিল। তাহলে এটা কি উদ্দেশ্য পবিত্র, তাই উপায় যাই হোক চলবে ধরনের মানসিকতা?


যুদ্ধের পরিণতি: সত্যিই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

যুদ্ধের শেষে:

  • দুঃশাসন, দুর্যোধন, কর্ণ, দ্রোণ—সব কৌরব সেনাপতি নিহত

  • পাণ্ডবরা ক্ষমতায় এলেও শান্তি পেল না

  • যুধিষ্ঠির রাজত্ব ছেড়ে দেন

  • কৃষ্ণের মৃত্যুর পর যাদব বংশ নিজেরাই আত্মবিনাশে লিপ্ত হয়

এই কি ধর্ম প্রতিষ্ঠার ফল? ধর্ম যদি ভারসাম্য, সুবিচার আর নৈতিকতাকে টিকিয়ে রাখার কথা বলে—তাহলে এর কী হল?


ree

যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি: দাঁড়িয়ে থাকা না হলে অন্যায় জিতে যেত

শ্রীকৃষ্ণ বারবার এক জিনিস বলেন:

“যদি তুমি ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ না করো, তবে অন্যায়ই জয়ী হবে। অন্যায় মেনে নেওয়াই অধর্ম।”

এই দৃষ্টিকোণ বলছে—ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোও ধর্ম। পাপকে মেনে নেওয়া, ক্ষমার আড়ালে দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে সমস্যা একটাই—যুদ্ধ করতে গিয়ে ধর্মের কতটা রক্ষা করা গেল আর কতটা নষ্ট হলো, সে প্রশ্ন অনিবার্য।


ree

উপসংহার: যুদ্ধ নাকি প্রতিচ্ছবি?

মহাভারতের ধর্মযুদ্ধ এক অর্থে আমাদের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এখানে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা—তা সরল রেখায় আঁকা যায় না। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যখন অস্ত্র হাতে নিতে হয়, তখন সেই ন্যায়েরও রং বদলায়।


তাই হয়তো মহাভারত বারবার বলে—ধর্ম এক সরল পথ নয়, এটা চলমান বোঝাপড়ার নাম। এখানে প্রশ্নই শেষ কথা।

Comments


bottom of page