top of page

Sondesh.tv

অহংকার ও আত্মপরিচয়ের মায়া: জীবনকে সহজ করার পথ

  • Writer: Arunava Khasnobis
    Arunava Khasnobis
  • Aug 3
  • 2 min read

অহংকার শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে একটা নেতিবাচক ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু এই অহংকারের শিকড় কী আসলে তা আমরা কখনও গভীরভাবে ভাবার চেষ্টা করি?

ভারতীয় দর্শনের একটি প্রধান শাখা অদ্বৈত বেদান্ত আমাদের সামনে এই প্রশ্নটি উপস্থাপন করে—যে আমরা কি আমাদের প্রকৃত পরিচয় জানি? যদি জানি তাহলে আমার সেই অন্তরস্বত্বার প্রতি আমার ধারণা ঠিক কি?


আসলে অদ্বৈত বেদান্ত মতে, খুব সহজ এবং অপুর্ণ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ব্রহ্মই সব, সবই ব্রহ্ম, আর এই সমস্ত কিছুর মতই আমিও ব্রহ্ম। অনেকেই খুব সহজ ভাবে বলে দেন এই কথা টা।


অহংকার কি আমাদের সত্যিকারের পরিচয়, নাকি এটি শুধুমাত্র একটি বিভ্রম বা মায়া?


অদ্বৈত বেদান্ত মতে, আমাদের প্রকৃত পরিচয় হলো আত্মা, যা শুদ্ধ চৈতন্য বা চেতনা। এই আত্মা চিরন্তন, অমর এবং অবিচ্ছিন্ন। অথচ বাস্তবে আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নানা রকম ক্ষণস্থায়ী ও বাহ্যিক পরিচয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলি। যেমন—আমাদের নাম, পদ, সম্পদ, খ্যাতি, সৌন্দর্য ইত্যাদি। এই ক্ষণস্থায়ী পরিচয়গুলো আমাদের অহংবোধ তৈরি করে, যা ক্রমাগত আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবনে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি করে।

ধরা যাক, আপনি কর্মক্ষেত্রে একটি প্রত্যাশিত পদোন্নতি পাননি। আপনার অহংবোধ বা বাহ্যিক পরিচয় এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে আপনি হতাশ ও ব্যথিত হন। অথচ, অদ্বৈত দর্শনের আলোকে দেখলে এই পরিস্থিতিটি আসলে আপনার প্রকৃত আত্মপরিচয়ের সঙ্গে কোনওভাবেই সম্পর্কিত নয়। যখন আপনি নিজের সত্যিকারের আত্মপরিচয় বা চৈতন্যের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন এই বাহ্যিক ব্যর্থতা আপনার অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট করতে পারে না। আপনার মন ভারমুক্ত থাকে, কারণ তখন আপনি নিজেকে আরও বড় পরিসরে দেখতে শুরু করেন।

অহংবোধের আরেকটি ভয়ানক রূপ হলো অন্যের সঙ্গে তুলনা করার প্রবণতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা অন্যদের অর্জন, সম্পদ, সুখ দেখে নিজেদের সঙ্গে তুলনা করি, যা আমাদের ভিতরে অস্থিরতা ও অসুখী অনুভূতির জন্ম দেয়। অদ্বৈত বেদান্তের দর্শন এখানে আমাদের শেখায়—নিজেকে কারও সঙ্গে তুলনা করার দরকার নেই, কারণ সকলের ভিতরে একই আত্মা বা চৈতন্য রয়েছে। যখন আপনি বুঝবেন আপনার এবং অন্যদের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনও পার্থক্য নেই, তখনই তুলনা থেকে মুক্তি পাবেন।

অহংবোধের প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত জীবনে নয়, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও গভীরভাবে পড়ে। অহংকারের কারণে আমরা কখনও কখনও অন্যের প্রতি কঠোর হই বা নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই না। এর ফলে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অদ্বৈত দর্শনের শিক্ষা এখানে আমাদের সাহায্য করতে পারে। যখন আমরা অহংবোধ ত্যাগ করে নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার সঙ্গে সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দিই, তখন পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়।

এছাড়া, অহংবোধের কারণে আমরা অনেকসময় নিজের ভেতরের সম্ভাবনাকে চিনতে পারি না। আমরা হয়তো এমন একটি পেশা বা জীবনধারা বেছে নিই যা আমাদের প্রকৃত স্বরূপের সঙ্গে মিল নেই, শুধুমাত্র সমাজের চোখে সফল হওয়ার জন্য। এর ফলে আমাদের ভিতরে অসন্তোষ ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। অদ্বৈত বেদান্ত আমাদের শেখায়—নিজের আসল স্বরূপ ও চৈতন্যকে চিনতে পারলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়, এবং সত্যিকার অর্থেই আমরা সন্তুষ্টি লাভ করি।


এই দর্শনের মাধ্যমে অহংকারের মায়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ব্যবহারিক ধাপ রয়েছে:

  • প্রতিদিন আত্মানুসন্ধানের চর্চা: দিনে কিছুটা সময় নিজের প্রকৃত স্বরূপ নিয়ে ভাবা এবং আত্মবিশ্লেষণ করা জরুরি।

  • ধ্যানের অভ্যাস: নিয়মিত ধ্যানের মাধ্যমে মনকে স্থির করে নিজের ভেতরের সত্যিকারের সত্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়।

  • নির্লিপ্ত দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতিটি পরিস্থিতি ও ফলাফলের প্রতি নির্লিপ্ত মনোভাব ধারণ করলে অহংবোধ কমে।

  • বিনয়ী ও নম্র হওয়া: অহংকার ত্যাগ করতে গেলে প্রতিটি সম্পর্ক ও পরিস্থিতিতে বিনয়ী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


এভাবে দৈনন্দিন জীবনে অহংকারের প্রভাব কমিয়ে নিজের প্রকৃত স্বরূপের প্রতি মনোযোগী হতে পারলে জীবন আরও সহজ, শান্তিপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। অদ্বৈত বেদান্তের এই দর্শন, সহজ অথচ গভীরভাবে, আমাদের সত্যিকার সুখ ও শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে।

Comments


bottom of page